Wednesday, October 28, 2020

কেড়কেড়া : মণিপুরিদের আকাশ প্রদীপ


কেড়কেড়া৷ মণিপুরিদের আকাশ প্রদীপ৷ কার্তিক মাস জুড়ে মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া বৈষ্ণবরা সন্ধ্যা হলে বাঁশের মাথায় বসানো লন্ঠন প্রজ্বলন করে বিষ্ণুর আশির্বাদ কামনা করে৷ উচ্চারণ করা হয় এই মন্ত্র- 'আকাশে সলক্ষ্মীক বিষ্ণোস্তোষার্থং দীয়মানে প্রদীপঃ শাকব তৎ।' অর্থাৎ, আকাশে লক্ষ্মীর সঙ্গে অবস্থান করছেন যে বিষ্ণু, তাঁর উদ্দেশে দেওয়া হল এই প্রদীপ।
যারা বৈষ্ণব নন, আপোকপা ধর্মানুসারী, তারা বলেন এই প্রদীপটি লক্ষী-নারায়ণের উদ্দেশে নিবেদিত নয় বরং আপোকপা বা পূর্বপুরুষদের স্মরণে প্রজ্জ্বলন করা হয়, যারা পরলোকে আছেন তারা যেন সেই আলোর রেখা ধরে নিকটজনদের আশীর্বাদ করতে পারেন৷ কৃত্যানুষ্ঠানটির নাম 'মেরা ৱাউংবা', মেরা হচ্ছে মণিপুরি বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাস৷
যুক্তিবাদীরা বলেন, আকাশে দীপ জ্বালানো হেমন্তকাল বরনের অংশ৷ শীতের আগমনের প্রস্তুতি হিসাবে আগুন বা তাপকে সংরক্ষণ করে রাখার একটা প্রতীকি উৎযাপন যা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷
মণিপুরি পুরাণগুলোতে অবশ্য এই আকাশ প্রদীপের ভিন্ন গল্প আছে৷ সুদুর অতীতের কোন এক সময়ে তিনজন ভাই বসতি গড়ার জন্য পাহাড়ে উঠে ৷ ছোট ভাইটি কিছুদুর এগিয়ে আর উঠতে পারে না, সেখানেই থেকে যায়৷ বড় ভাইয়েরা পাহাড়ে উঠে বসতি গড়ে তোলে৷ যাবার আগে তারা ছোটভাইকে বলে যায়, বছরের মাঝামাঝি এই সময়টাতে সে যেন উচুঁ বাঁশের মাথায় লন্ঠন জ্বালিয়ে রাখে, যাতে ছোট ভাই ঠিক আছে কিনা তারা জানতে পারে৷ তারপর থেকে এটা মণিপুরের ঐতিহ্য হয়ে যায়৷ এই কাহিনীটি মণিপুর উপত্যকার পাহাড় ও সমতলে বাস করা ৩০টির বেশি ছোট ছোট জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের কথা বলে৷ মণিপুর রাজ্যে এই উৎসবটি উৎযাপিত হয় তাদের মধ্যকার বন্ধন যে দৃঢ় সেটা দেখাতে৷
যে যাই বলুক, কার্তিক মাসে আকাশ প্রদীপ দেখলে লতার এই গানটির কথাই মনে পড়ে—
'আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে,
আমার নয়ন দু’টি শুধুই তোমারে চাহে
ব্যথার বাদলে যায় ছেয়ে।।'
২৮ অক্টোবর, ২০১৭

Sunday, July 05, 2020

বাঙালি তরুণ কবির বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় কাব্যচর্চ্চা

কবি দেবাশিস চৌধুরী বাংলা ভাষার তরুণ কবি৷ থাকেন ভারতের ত্রিপূরা রাজ্যের ধর্মনগরে৷ মাতৃভাষা বাংলা হলেও তিনি কাব্যচর্চা করেন ত্রিপূরার আরেকটি প্রান্তিক ভাষা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ঠারে৷ সেখানকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি জনগোষ্ঠীর সাথে তাঁর আত্মার সম্পর্ক৷ কবি বলেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি তার দ্বিতীয় মাতৃভাষা ৷ প্রায় ত্রিশ চল্লিশটি কবিতা লিখেছেন এই ভাষায়৷ ভাষার দখলও অসাধারণ৷ হয়তো নিয়মিত এই ভাষার সাহিত্য পাঠ করেন৷
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় কবি দেবাশিস চৌধুরির লেখা দুইটি কবিতা তুলে ধরলাম৷
পাহুরলু⚀
মানু মরিয়া হদেইলে
পাহিয়া জিংতা অইতারা।
রাতিহান অনির আগে
চান্দগো নিকুলিয়া
মোর মুরগত পরের!
নিংশিং অনির আগেই
সভ্যতার হাবি ইতিহাস
মি পাহুরানি অকরলু!
হে ইমা মোর খৈতুগত
অমৃত না ঢালে দিস্।
ইমার পূজা⚀
কোকিলাগো রহিরি
কুহু কুহু করিরি
হেইকিরির নুংসি গতে
বসন্ত হান দেহুরি।
মেঘালা ভাবহান
হুনো মোর কথাহান
ইমার পূজা চলেছে
কাতকরৌরি হমাহান।
আহো আজি বেইবুনি
ইমার পূজা করানি
হারৌ অইয়া থানির কা
ইমার চরণে মাতানি।
বর দে দূর্গা ইমা
কতিঔ তোর মহিমা।
আমি তোর সৌ সুমারা
লদে আমার হমা।
নুয়ারা পানি দুরেই কর
ইমা খানি দয়া কর
তোর চরণে বর মাগৌরি
হাবিরে দয়া কর।
ইমা তি স্বর্গে থাইয়া
না থাইস আমারে পাহুরিয়া
মর্ত্তে তোর জিয়াজিপুত
থাইতাঙাই তোরে নিঙকরিয়া।
আমার নিজের মাতৃভাষা বিষ্ণু্প্রিয়া মণিপুরি হলেও আমি বাংলায় লেখালেখি করি৷ আরো অনেকেই করেন যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়৷ কিন্তু কোনোদিন দেখলাম না বাংলাদেশের কোনো বাঙালি কবিকে চাকমা, মারমা, ত্রিপূরা, মান্দি, মণিপুরি, সাঁওতালি কোনো ভাষায় কোনোদিন কিছু লিখতে৷ আমি খুব আশাবাদী কবি দেবাশিস চৌধুরীর মতো এমন কেউ হয়তো এই ভূখন্ড থেকেও উঠে আসবেন৷
সকল মাতৃভাষা বেঁচে থাকুক৷