Wednesday, March 27, 2013

আজ য়াওশাঙ । লেইশাঙ জন্ম ।




আজ য়াওশাঙ। দোলপূর্ণিমার মণিপুরি সংস্করণ। মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়ারা এই উৎসবকে ‘জন্ম’ বা ‘লেইশাঙ জন্ম’ও বলে থাকে। মণিপুরিদের হোলি হিন্দুদের থেকে অনেকখানি ভিন্ন। য়াওশাঙ এখন মণিপুরি বৈষ্ণবদের কৃত্য হলেও এর প্রচলন মণিপুরিদের হিন্দুধর্মের বলয়ে আসার অনেক আগে থেকেই। তখন উৎসবটি শীতকালের বিদায় এবং বসন্ত কালের আগমনবার্তা বয়ে নিয়ে আসতো।
য়াওশাঙ উৎসব চলে পাঁচদিনব্যাপী। প্রথম দিনটিতে বাঁশ, কাঠ এবং খড়ের ছাউনি ব্যবহার করে ছোট আকৃতির চালাঘর বা লেইশাঙ বানানো হয়। পুজাশেষে লেইশাঙে আগুন দেয়া হয়। লেইসাঙের পবিত্রভস্ম ও ছাই সবাই নিজ নিজ কপালে মাখে এবং বাড়ীতে নিয়ে যায়। লেইসাঙ জন্মের দ্বিতীয় দিনটি থেকে মুল উৎসব শুরু। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে নানান বয়সের মানুষ কাঁধে ঝুলি ঝুলিয়ে অথবা চটের ব্যাগ, বালতি হাতে করে একে অন্যের বাড়ীতে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ভিক্ষা করতে বের হয়। যারা ভিক্ষা করে তারা সমস্বরে সুর করে “মহাপ্রভূর জন্ম হরি হরি বোলা – এ হরি”, “হরি বোলা – এ হরি” ধ্বনি উচ্চারন করতে করতে এক বাড়ী থেকে অন্য বাড়ীর সীমানায় প্রবেশ করে। ভিক্ষা হিসাবে মুলত চাল দেয়া হয়, অনেকে ফলমুল ও নগদ টাকাও দিয়ে থাকে। ভিক্ষার দলগুলো একে অন্যের মুখোমুখি হলে একে অন্যের মুখে রঙ মাখিয়ে দেয়।
য়াওশাঙের দিনগুলোতে মণিপুরি মৈতৈদের ঐতিহ্যবাহী থাবাল-চোঙবা নৃত্যের পরিবেশনা চলে । ‘থাবাল’ মানে চন্দ্রালোক, ‘চোঙবা’ মানে লাফ। চাদেঁর আলোয় একে অন্যের হাত ধরে লাফ দিয়ে নাচার ঐতিহ্যটি ২০০০ বছরের পুরোনো। মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়ারা মন্দিরা করতাল মৃদঙ্গ ও ঢোল সহযোগে ভ্রাম্যমান নৃত্যগীতের দল বা হোলি বের করে। গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে হোলির দলগুলো গান পরিবেশন করে থাকে। হোলির বেশীর ভাগই ব্রজবুলি ও বাংলা ভাষায়য় লেখা। গানগুলিতে মুলত বসন্তের প্রকৃতিবর্ণন ও কৃষ্ণ-গৌরাঙ্গ তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়। যেমন-
বসন্ত আগত বৃন্দাবনমত
বিহরহী রসিকমুরারী
মানেনা মানেনা মনে
মন করে উচাটন
উচাটন করে কিবা রঙ্গে
কিংশুক সারিশুক পরিসুখ নবসুখ..
সবাইকে য়াওশাঙ উৎসবের শুভেচ্ছা। দোলের আবিরে ঘুচে যাক জগতের সমস্ত অন্ধকার।