Sunday, October 08, 2017

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি লিপি


অভ্র কি-বোর্ডে ''ৱ' নামে একটা বর্ণ দেখে থাকবেন যেটা আমরা বাংলা লেখার সময় ব্যবহার করি না ৷ বর্ণটি অসমীয়া, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ও মৈতৈ ভাষায় ব্যবহৃত হয় ৷ বর্ণটির উচ্চারণ হয় 'উয়' (wo) ৷ আকার যোগ হলে হবে 'উয়া' (wa)৷
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি'তে ৱ বর্ণের কিছু ব্যবহারঃ
নুৱা (nuwa)
ৱাইসাঙনি ( waisangoni)
ৱারৌ (warou)
গুৱাহাটি (guwahati)
ৱানথা (wantha)
ৱাশাক (washak)
অনেকে দাবি করে থাকেন অসমীয়া, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, মৈতৈ, উড়িয়া, মৈথিলী ভাষাগুলি বাংলা লিপি ব্যবহার করে লেখা হয় ৷ ব্যাপারটা আসলে তা নয় ৷ বাংলা বর্ণমালা নামে যে অক্ষরগুলোর সাথে আমরা পরিচিত সেগুলি আদতে বাঙালিদের উদ্ভাবিত নয় ৷ ব্রাহ্মী লিপি পরিবারের অন্তর্গত পূর্ব নাগরী লিপির একটি রূপকে ভারতবর্ষের এই অঞ্চলের কিছু ভাষাগোষ্ঠি গ্রহন করে নিজেদের ভাষা লেখার কাজে ৷ বাঙালিরা তার নাম দেয় 'বাংলা লিপি' ৷ অসমীয়াদের কাছে তা হয়ে যায় 'অসমীয়া লিপি' ৷ ওড়িয়ারা এই লিপিটাকেই গোলাকার ফরমেটে লিখত, তারা এর নাম দেয় 'ওড়িয়া লিপি' ৷ মণিপুরি মৈতৈদের নিজস্ব বর্ণমালা থাকলেও তারা এই লিপিকে গ্রহন করে বহুল ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে; প্রাচীন মৈতৈ মেয়েক পুনরুত্থানের আগে এই লিপিই 'মৈতৈ লিপি' হিসাবে পরিচিত ছিল ৷ ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার পাঠ্যবই কনাক-পাঠে এই বর্ণগুলোকেই বলা হয়েছে 'বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি মেয়েক' বা বর্ণমালা ৷
তবে কারা প্রথম এই লিপি ব্যবহার করেছে তা নিয়ে সন্দেহাতীতভাবে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয় ৷ 'কুটিল লিপি' বা বর্ণকে বাঁকা করে লেখার প্রবনতা চালু হয় খৃষ্টীয় সপ্তম শতকে, কুটিল লিপি থেকেই নবম শতকের দিকে এই বর্ণগুলোর উদ্ভব হয়েছে বলে ভাষাবিদরা মনে করেন ৷ আদি বাংলা লিপির নিদর্শন পাওয়া যায় সেন আমলের রাজাদের কিছু দানপত্রে ও সুন্দরলিপিতে, একাদশ দ্বাদশ শতকের শিলালিপি, পোড়ামাটির ফলক ও প্রাচীন পুঁথিতে ৷ অনুরূপভাবে আদি অসমীয়া লিপির নির্দশন মেলে তখনকার রাজাদের আদেশনামা, ভূমি প্রদানপত্র, এবং তাম্রফলকে; সাঁচি নামক গাছের বাকলে এই অসমীয়া লিপিতে ধর্মীয় গ্রন্থ ও কাহিনী লেখা হতো । অসমীয়া বর্ণমালায় আরেকটি বর্ণ আছে ''ৰ', এটার উচ্চারণ 'র' এর মতো ৷ অপরপক্ষে প্রস্তরগাত্রে খোদিত প্রাচীন ওড়িয়া ভাষা ও বর্ণমালার রূপ মেলে তারও আগে, দশম শতকে ৷ ওড়িয়া পুঁথিগুলো অনেক প্রাচীন, ওগুলো তালপত্রে কাঠি দিয়ে লেখা হতো; কোণা থাকলে পাতা ছিঁড়ে যাবে এই ভয় থেকে এলো গোলাকার লিপির ধারনা ৷ কাজেই লিপির মালিকানা নিয়ে ধস্তাধস্তি করে তেমন লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ ৷
আজকের লেখাটি তরুণ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি লেখকদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত, যারা পূর্ব-নাগরী লিপির বর্ণগুলো ব্যবহার করে লেখার জন্য হীনমন্যতায় ভূগে থাকেন , এবং মনে করেন ওগুলো বাঙালিদের বা অসমীয়াদের মৌরসী সম্পত্তি ৷ এই পর্যায়ে এসে 'নিজস্ব অক্ষর' থাকার ধারনাটি একেবারেই বালখিল্য এবং অবাস্তব ৷ভাষা-সাহিত্যের বিকাশের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা থাকতেই হবে এমন কথা নেই— ইংরেজি, হিন্দি বা উর্দু, কোন ভাষারই নিজস্ব অক্ষর নেই ৷